Corporate Daduji

A Corporate Daduji’s Creation

Unspoken Gita5(B)

An Unspoken Gita –Part 5: কৃষ্ণ ও দ্রোণাচার্যের শেষ কথোপকথন


 🎙️জীবনে অনেক সময় আমরা ভাবি— “আমি যা করছি, তা একদম ঠিক। ন্যায্য। যুক্তিসঙ্গত।”
কিন্তু সেই ‘ঠিক’ হওয়ার মধ্যেই অনেক সময় লুকিয়ে থাকে এক ভয়ংকর ভুল
👉 এক ভুল সিদ্ধান্ত,
👉 এক অন্ধ মোহ,
👉 আর তার ফলাফল হয় ধ্বংস… নিজেরও, প্রিয়জনেরও!

💥 ঠিক এমনটাই হয়েছিল মহাভারতে আচার্য দ্রোণাচার্যের জীবনে।

🎬 আজকের এই ভিডিওটি যদি আপনি মন দিয়ে শোনেন, তাহলে আপনি শুধু মহাভারতের এক চরিত্রকে নয়, নিজের জীবনের অনেক ভুল সিদ্ধান্তকেও নতুন চোখে দেখতে শিখবেন…

🪔 চলুন শুরু করি…


🧙‍♂️ দ্রোণাচার্য – পরশুরামের শিষ্য ,একজন অসাধারণ অস্ত্রগুরু।

ব্রাহ্মণ হয়েও যুদ্ধে পারদর্শী। হস্তিনাপুরের রাজগুরু।
তাঁর শিক্ষা, শিষ্যদের জন্য ছিল আশীর্বাদ।
কিন্তু এক জায়গায় তিনি করলেন এমন এক ভুল… যা তাঁকে ‘আচার্য’ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল এক ‘মোহগ্রস্ত পিতা’র ভূমিকায়।


🧙‍♂️ দ্রোণাচার্য — যিনি একসময় ছিলেন আচার্য,
আজ তিনি কৌরব সেনার সেনাপতি…
শক্তিতে অতুলনীয়, অস্ত্রে অপ্রতিরোধ্য।

🌪️ মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ১৫তম দিন।
যুদ্ধ চরমে।
পাণ্ডবপক্ষ ক্রমেই কোণঠাসা।

আর একদিকে —
⚔️ দ্রোণাচার্য, যিনি তখন পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য, অতুলনীয়।
যোদ্ধা হিসেবে তিনি যেন এক চলন্ত প্রলয়…
তাঁকে হারানো অসম্ভব মনে হচ্ছিল।

🎯 কৃষ্ণ বুঝলেন —
💡 যতক্ষণ দ্রোণাচার্য অটুট থাকবেন,
ততক্ষণ ধর্মের বিজয় অসম্ভব।

তাই তিনি তৈরি করলেন এক পরিকল্পনা Stategy—
🕳️ এক কৌশল… এক মনস্তাত্ত্বিক আঘাত…

“অশ্বত্থামা নিহত হয়েছে।”
এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে দ্রোণাচার্যের কাছে —
তাঁর মনের ভিত কাঁপিয়ে দিতে হবে।

🦣 ভীম হত্যা করলেন এক গজপালিত হাতিকে,
যার নাম ছিল – অশ্বত্থামা।

তারপর ভীম গেলেন দ্রোণাচার্যের কাছে এবং বললেন —
“আপনার পুত্র অশ্বত্থামা নিহত হয়েছে!”

⚔️ কিন্তু দ্রোণাচার্য ভীমের কথায় বিশ্বাস করলেন না।
তাই তিনি গেলেন একমাত্র এমন একজনের কাছে —
যার মুখে কখনো মিথ্যা উচ্চারিত হয়নি

🎯 যুধিষ্ঠির — সত্যবাদী, ধর্মপুত্র।

🗣️ যুধিষ্ঠির ধীরে বললেন —
অশ্বত্থামা হতঃ…
(অশ্বত্থামা নিহত হয়েছে…)

— তারপর নিম্নস্বরে বলে ফেলেন —
না রোহঃ কুঞ্জরঃ।
(…কিন্তু সে একজন হাতি।)

📢 কেউ কেউ বলে থাকেন, সেই মুহূর্তে —
নরনারায়ণের আশীর্বাদে একটি শঙ্খধ্বনি অথবা ঢাকের শব্দ হয়,
যার ফলে যুধিষ্ঠিরের শেষ কথাগুলো —
দ্রোণাচার্যের কানে পৌঁছায় না।

🎧 তিনি শুনলেন শুধুই —
অশ্বত্থামা হতঃ…
তারপর আর কিছু নয়…

💔 মুহূর্তেই ভেঙে গেলো এক পিতার বুক।
⚡ তাঁর হৃদয়ে বজ্রাঘাত হল —
🥀 তিনি বিশ্বাস করে ফেললেন, তাঁর প্রিয়পুত্র আর জীবিত নেই।

⚔️ তিনি ফেলে দিলেন নিজের সমস্ত অস্ত্র…
🌫️ তাঁর সমস্ত শক্তি যেন মিলিয়ে গেল বাতাসে…
তিনি বসে পড়লেন ধুলোর মধ্যে…
নিঃস্ব, শূন্য, বিক্ষিপ্ত…

একজন যোদ্ধা নয়,
🌪️ এক পিতা — যিনি মোহে অন্ধ হয়েছিলেন —
আজ নিজেই নিজের আত্মাকে হেরে বসলেন।


কৃষ্ণ দ্রোণাচার্যের সামনে এক প্রশ্ন রাখেন—

🗣️গুরুদেব…
আজ যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র তুলবার আগে,
আপনার কাছে একমাত্র অনুরোধ —
⚖️ একবার অন্তত ভেবে দেখুন…

যদি আমি বলি —
যে অশ্বত্থামা নিহত হয়েছে, সে আপনার পুত্র নয়,

বরং একজন হাতী,
তবে কি আপনার অন্তর আবার ❄️ করুণায় ভরে উঠবে?

আপনার জীবনের লক্ষ্য বদলে যাবে❓

কি আপনার বুকের পাথর গলে,
আপনি ভাববেন –
যদি আজ নয়, কাল তো ছেলেটি মরবেই…
🌍 এই পৃথিবীতে কে চিরস্থায়ী?

তবে মূল প্রশ্ন তো এটা নয় গুরুদেব…
আপনার জীবন, আপনার জ্ঞান, আপনার সাধনা —
এতো কিছু কি শুধুই আপনার পুত্রের জন্য ছিলো?

🤔 আপনার জীবনের আর কোনও অর্থ ছিলো না?

আপনি তো ছিলেন এক মহান গুরু!
যাঁর জীবন ধর্ম, জ্ঞান আর ন্যায়ের জন্য উৎসর্গিত।

তবু আজ দেখছি, এক পিতার মায়া
এক গুরুর ধর্মকে গ্রাস করেছে…

👉 তাহলে আপনার সমস্ত সিদ্ধান্ত কি শুধুই আপনার ছেলের উপর নির্ভর করে?
আপনি কি শুধু পিতার দৃষ্টিতে দেখেছেন সবকিছু?”

আপনার সেই পুত্র, যার জন্য আপনি এতটা অন্ধ —
আপনি কি তাঁকে সত্যি কিছু দিতে পেরেছেন?

🎓 আপনি তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন,
কিন্তু আপনি তাঁকে ধর্ম শেখাননি
তিনি হয়ে উঠলেন এক যোদ্ধা,
কিন্তু কখনও এক ধর্মরক্ষক নয়।

🌊 আপনি তাঁকে তরঙ্গ দেখিয়েছেন,
কিন্তু গভীরতা শেখাননি…

যদি আপনি তাঁকে শেখাতেন —
📿 কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়,
🛡️ কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়,
তাহলে আজ হয়তো তিনি যুদ্ধে অধর্মের পক্ষে থাকতেন না…
বরং ধর্মের জন্য লড়তেন!


আপনি বলবেন —
আমি তো ওকে ভালোবাসি…

❌ না গুরুদেব!
এটা প্রেম নয়… এটা মোহ!

প্রেম মুক্তি দেয়…
আর মোহ?
মোহ তো বাঁধন হয়ে ওঠে… শৃঙ্খল…

🌸 প্রেমে থাকে করুণা,
🔥 মোহে থাকে আবেগে ,অন্ধতা।

আপনি যখন দেখলেন —
আপনার পুত্র দুধ না পেয়ে আটা মিশানো জল খাচ্ছে,
তখন আপনার তপস্যা,সাধনা ভেঙে গেল…
কিন্তু যদি আপনি তাকে শেখাতেন —
🪔 “সন্তোষই শ্রেষ্ঠ ধন”
🌾 “সংঘর্ষ করো, ফল আসবেই”

তাহলে আজ তার চরিত্র, তার ভবিষ্যৎ —
দুটোই হয়তো অন্যরকম হতো।

😞 আপনি তাঁর জন্য সব কিছু করতে গিয়ে,
তাঁর আত্মাকে ভুলে গেলেন…

এটাই তো আপনার ব্যর্থতা গুরুদেব…

আপনি গুরু ছিলেন, কিন্তু
পিতৃত্বের মোহে অন্ধ হয়ে উঠলেন…


“গুরু হওয়া মানে কেবল বিদ্যা দান নয়…
👉 গুরু মানে চরিত্র গঠন করা।
👉 গুরু মানে একজন মানবের আত্মাকে জাগ্রত করা।

🔸 “গু (Gu)” মানে: অন্ধকার, অজ্ঞতা, অজ্ঞানতা
🔸 “রু (Ru)” মানে: দূর করা, অপসারণ করা, নাশ করা

📖 তাই “গুরু” শব্দের প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায় —
👉 “যিনি অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করেন”
অর্থাৎ, একজন সত্যিকার গুরু হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ছাত্রের মন থেকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে তাকে জ্ঞান, সত্য ও ধর্মের আলোর দিকে নিয়ে যান।

🪔 এই কারণেই গুরু তুল্য হয়েছেন ঈশ্বরের সঙ্গে –
🔱 “গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু, গুরু devo মহেশ্বরঃ…”
🙏 তাই গুরু শুধু শিক্ষক নন, তিনি হলেন পথপ্রদর্শক, আলোর দিশারি।


আপনি যদি একটিমাত্র ছেলের জন্য নিজের ধর্ম বিসর্জন দেন,
তবে আপনি শুধু একজন পিতা, গুরু নন!”

🧘‍♂️ “প্রেম জন্মায় করুণা থেকে, আর মোহ জন্মায় স্বার্থ থেকে।
আপনার ছিল মোহ…
তাই আপনি একজন সত্যিকারের প্রেমিক পিতা হতে পারলেন না।”

👉 আপনি যদি সত্যিকার গুরু হতেন,
তাহলে আপনি আপনার প্রতিটি শিষ্যকে—
নিজের পুত্রের মতো করেই গড়ে তুলতেন…

কিন্তু আপনি তো…
🧿 শুধুই একজন পক্ষপাতদুষ্ট পিতা হয়ে উঠলেন…

এমনকি আজও…
যখন সত্য আপনাকে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে —
তখনও আপনি চোখ বন্ধ করে আছেন…
❌ কারণ, আপনি এখনও মোহে আচ্ছন্ন…

গুরুদেব…
এটাই সময় —
🌅 মোহ থেকে মুক্ত হবার…
🕊️ সত্যকে গ্রহণ করার…

এটাই সময় —
পুনরায় গুরু হবার!
পুনরায় এক ঋষির মতো জেগে ওঠার!
🌺 এক সত্যভাষীর মতো আত্মসমর্পণ করার!


🙏 প্রণাম গুরুদেব…
আপনার শিক্ষা, আপনার ভুল, আপনার প্রেম, আপনার মোহ…
সবটাই আমাদের জন্য এক মহা-উপদেশ…

🎭 কৃষ্ণের এই প্রশ্ন দ্রোণাচার্যকে নাড়িয়ে দেয়…


🧠 এখানেই আসল বিষয়টা স্পষ্ট হয়…

🌪️ দ্রোণাচার্য তাঁর সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সাধনা, সমস্ত ধর্মজ্ঞান ভুলে গিয়েছিলেন… এক পিতা হিসেবে!

তিনি অশ্বত্থামার প্রতি এতটাই মোহে মুগ্ধ ছিলেন, যে তিনি তাকে ভালো মানুষ নয়—
বরং একজন শক্তিশালী যোদ্ধা বানাতে ব্যস্ত ছিলেন।

📛 কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন—
👉 শুধু যুদ্ধজয় নয়, একজন সন্তানের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া,
👉 জীবনকে ন্যায়ের পথে চালানো—
এই ছিল তাঁর আসল গুরুদায়িত্ব!

🩸 কিন্তু অশ্বত্থামা শিখেছিল ক্ষমতা, প্রতিশোধ আর হিংসার পথ।


🪶 কৃষ্ণ বলেন—
“আপনি যদি আপনার ছেলেকে অন্ন না দিতে পেরে নিজের সাধনা ভেঙে দেন…
তাহলে আপনি এক দুর্বল পিতা!

কিন্তু আপনি যদি সেই সন্তানকে শিক্ষা দেন, কিভাবে সংগ্রামের মধ্যেও আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে হয়…
তবে আপনি হতেন একজন সত্যিকারের গুরু!”

🔥 কিন্তু দ্রোণ নিজের মোহে একেবারে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন…
সেই মোহ তাঁকে এমন এক অন্ধকার পথে নিয়ে গিয়েছিল—

👉 যেখানে তিনি নিজের সমস্ত শিষ্যদের ভবিষ্যৎকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন প্রতিহিংসার আগুনে —
রাজা দ্রুপদের অপমান ও অবমাননার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে।

👉 যেখানে তিনি বিসর্জন দিলেন নিজের সমস্ত ধর্মজ্ঞান,
নিজের আত্মিক সাধনা, গুরুসত্তা ও ব্রাহ্মণত্ব।

⚖️ তাঁর গোটা জীবন…
তাঁর সমস্ত সিদ্ধান্ত…
পরিচালিত হচ্ছিল সেই প্রতিহিংসার আগুন থেকে জন্ম নেওয়া মোহ দ্বারা।

🎯 আর ঠিক সেখানেই তিনি সরে গেলেন তাঁর প্রকৃত গুরু-ধর্ম থেকে…
এক মহান আচার্য, এক ধর্মবান গুরু —
হয়ে উঠলেন শুধুই এক প্রতিহিংসায় জর্জরিত, পুত্রমোহে গ্রাসিত ব্যক্তি।


🧿 এই গল্পটা আমাদের শেখায় —
আমরা অনেক সময় নিজেদের সঠিক বলেই ভাবি…
আমরা ভাবি, “আমার প্রিয়জনের জন্য সব করাই ন্যায্য!”

কিন্তু যদি সেই ভালোবাসা যুক্তিহীন, ধর্মহীন, স্বার্থান্ধ হয় —
তবে সেই ভালোবাসা নয়, সেই মোহ।

❌ আর মোহের ফল কখনো ভালো হয় না।


🔚 উপসংহার:

🎯 “ভুল অনেক সময় ‘ঠিক’ এর ছদ্মবেশে আসে…
তাই সঠিক সিদ্ধান্তের আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো—
❓এটা কি আসলেই ধর্মসঙ্গত?
❓এটা কি শুধুই আমার প্রিয়জনের জন্য, নাকি সকলের মঙ্গলের জন্য?”

🌺 “জীবনে গুরু হওয়া সহজ নয়…
কিন্তু একজন সত্যিকারের গুরু—
নিজের মোহ, নিজের পছন্দ, নিজের সন্তান—
সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ধর্ম ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায়।”


🙏 এই ছিল “An Unspoken Gita” সিরিজের আরও এক অধ্যায়…
দ্রোণাচার্যের জীবনের এক এমন ভুল, যা আজও আমাদের শেখায় —
👉 কিভাবে ‘ভুল’কে বুঝে নিতে হয়, ‘সঠিক’ সাজলেও!

📍 Next Episode:
“শ্রীকৃষ্ণ ও মৃত্যু শয্যায় শুয়ে থাকা এক পুরুষ ভীষ্মের শেষ কথোপকথন”—


🌸 জয় শ্রীকৃষ্ণ! 🌸